চুল পড়ার কারণ সমূহ ব্যাখা
আমাদের প্রত্যেকের শারীরিক গঠন আলাদা। সৃষ্টিকর্তা আমাদের প্রত্যেকে ভিন্ন ভাবে সৃষ্টি করেছে। তাই আমাদের সমস্যা ও আলাদা হয়ে থাকে। চুলের সমস্যা এটি একটি খুবই সাধারণ সমস্যা। শতকরা ৯০ ভাগ নারী এই সমস্যা ভোগ করে থাকে। আমারা অনেকই জানি নাহ এই সমস্যার কারন কি, কেন হচ্ছে। এই সমস্যা গুরুত্বর না হলে আমারা ডাক্তারের সরণাপন্ন হই নাহ।
চুল ঝরে যাবার কারণ কিঃ
১. ভিটামিন এর অভাবঃ- আমরা প্রতিদিন যা খাই তা অবশ্যই পুষ্টিকর হতে হবে। পুষ্টিকর খাবার এর অভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে তার মধ্যে চুল ঝরে যাওয়া অন্যতম। চুল ভালভাবে বেড়ে উঠার জন্য দরকার পুষ্টিকর খাবার।
- আমাদের প্রতিদিন ভিটামিন ই যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে তাও যদি না কমে তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে ।
২. হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ
এই ভারসাম্যহীনতার একটি সাধারণ কারণ হল পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS)। এটি অন্যান্য লক্ষণ এবং উপসর্গগুলির সাথে একটি মহিলার ডিম্বাশয়ে সিস্টের দিকে নিয়ে যায়, যার মধ্যে চুল পড়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। কিছু ধরণের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বন্ধ করা অস্থায়ী হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে। যে মহিলারা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে তাদের মাথার ত্বকে চুল পাতলা হতে পারে। তাই সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে।
৩. উকুন এর সমস্যাঃ
মাথার উকুন হল ক্ষুদ্র, ডানাবিহীন, পরজীবী পোকা যা মানুষের চুলে বাস করে। এগুলি একটি সাধারণ সমস্যা এবং অত্যন্ত সংক্রামক। তারা পরিত্রাণ পেতে কঠিন হতে পারে. ডিমগুলো নিট নামে পরিচিত। একটি লাউস রক্ত জমাট বাঁধা থেকে রোধ করতে খাওয়ানোর সময় হোস্টের মধ্যে লালা ইনজেকশন করে। এর ফলে হোস্টের জন্য অ্যালার্জি, চুলকানি সংবেদন হতে পারে। খিটখিটে ত্বকে আঁচড় দিলে সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। এ ছাড়া মাথার উকুন রোগ ছড়ায় না এবং এগুলো বিপজ্জনকও নয়।একটি সেশনে অন্তত দুবার মাথার খুলি থেকে চুলের শেষ পর্যন্ত পুরো মাথা আঁচড়ান। আর উকুন না পাওয়া গেলে অন্তত 2 সপ্তাহের জন্য প্রতি 3 থেকে 4 দিনে এই প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করা উচিত। কিছু প্রাকৃতিক উদ্ভিদ তেল উকুন এবং ডিমের উপর বিষাক্ত প্রভাব ফেলতে পারে। যেমনঃচা গাছের তেল, মৌরি তেল,লেভেনডার তেল।
৪. খুশকির সমস্যাঃ
তৈলাক্ত এবং খিটখিটে মাথার ত্বক অপরিষ্কার মাথার ত্বক এবং চুল সংবেদনশীল মাথার ত্বক (চুলের পণ্যের কারণে) মাথার ত্বকে অত্যধিক তেলের কারণে ছত্রাক সংকুচিত হয় ত্বকের অ্যালার্জি যেমন একজিমা শুষ্ক মাথার ত্বক।খুশকি আমাদের চুলের অন্যতম শত্রু। এটি তে ভুগছে পৃথিবীর হাজার হাজার মানুষ। বর্তমানে অনেক পণ্য বের হয়েছে খুশকির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য কিন্তু তাও এই সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে নাহ। ক্যামিক্যাল যুক্ত পণ্য অনেক ধরনের খারাপ দিক থাকে যা চুলের ক্ষতি বয়ে আনে। ফলাফল হয়ে থাকে চুল ঝরে যাওয়া। খুশকি থেকে মুক্তির জন্য প্রাকৃতিক প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে তাতে করে কিছুটা উপকার হতে পারে। প্রাকৃতিক প্যাকে কোনো ধরনের ক্যামিক্যাল থাকে নাহ তাতে করে চুলের ক্ষতি কম হয়ে থাকে। সপ্তাহে ১দিন মাসে ৪বার হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. মাথার ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণঃ
এটি বিভিন্ন কারনে হতে পারে অনেক বেশি ক্যামিক্যাল যুক্ত পণ্য ব্যবহার এর ফলে। অন্যের ব্যবহার করা চিরুনি ব্যবহার করলে।স্ক্যাল্প ইনফেকশন মাথার ত্বকের সংক্রমণ আপনার মাথার ত্বকে আঁশযুক্ত এবং কখনও কখনও স্ফীত অঞ্চল হতে পারে। আপনি আপনার মাথার ত্বকে ছোট কালো বিন্দুর মতো দেখতে দেখতে পারেন। এগুলো আসলে চুলের স্টাব। কিছু মানুষের একটি টাক স্পট বিকাশ। অবশ্যই বেশি সংক্রামন হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে ।
৬. মা হবার পরঃ
মা হবার পর শরীরের অনেক ধরনের ভিটামিনের অভাব দেখা দেয় তাতে করে চুল পরে পরিমান বেড়ে যায়। মাতৃকালীন এর পর অনেক পুষ্টি কর খাবার খেতে হবে। যাতে শরীরের ঘারতিপূর্ণ হয়ে যায়।
৭. ভেজা চুল চুরুনী দিয়ে ব্রাশ করাঃ
ভেজা চুল আচরানো উচিত নয়। ভেজা অবস্থায় আমাদের চুলের গোরা অনেক নরম থাকে তাতে করে চুলে জোরে টান লাগার কারনে চুল ঝরে যেতে পারে।
৮. ক্যামিক্যাল যুক্ত পণ্য ব্যবহারঃ
আমরা নিয়মিত যে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার এবং ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করি তাতে হাইড্রেটিং উপাদান থাকে। যদিও তারা শক্তিশালী ক্লিনজার হতে পারে, অনেক ক্ষেত্রে এগুলি খুব ঘর্ষণকারী এবং মাথার ত্বকে জ্বালাতন করতে পারে, যার ফলে চুল দুর্বল হয়ে যায় এবং চুলের ক্ষতি হতে পারে। যদি আমরা এই পণ্যগুলি নিয়মিত ব্যবহার করি, দীর্ঘমেয়াদে, আমরা যা খুঁজছি তার থেকে বিপরীত প্রভাব অর্জন করতে যাচ্ছি: ঝরঝরে, ঝলমলে কম চুল যা দ্রুত চর্বিযুক্ত হয়, সেইসাথে খিটখিটে মাথার ত্বক এবং আরও ভঙ্গুর কৈশিক ফাইবার, যার ফলে চুল আরও সহজে ভেঙ্গে যায়।এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করুন যাতে অ্যামোনিয়াম সালফেট নেই। এটি একটি ঘষিয়া তুলিয়া ফেলিতে সক্ষম ডিটারজেন্ট যা প্রচুর ফেনা তৈরি করে কিন্তু অন্যদিকে, সমস্ত প্রয়োজনীয় তেলগুলি সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করে যা প্রাকৃতিকভাবে চুলকে চকচকে এবং স্বাস্থ্যকর করে তোলে। আসলে, এই উপাদানটি চুলে উপস্থিত প্রোটিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং চুল গজানো কঠিন করে তোলে। প্রাকৃতিক সূত্র ধারণ করে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো যা ঘর্ষণকারী নয় এবং যতটা ফেনা তৈরি না করেও, দক্ষতার সাথে চুল পরিষ্কার করে এবং এর সুস্থতায় অবদান রাখে। ডাইমেথিকোন নেই এমন কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এটি এক ধরনের সিলিকন যা ঘন ঘন ব্যবহার করলে ত্বক এবং মাথার ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
৯. বয়স এর কারণেঃ
বয়স বাড়ার সাথে সাথে, বেশিরভাগ লোক কিছু চুল পড়া লক্ষ্য করে কারণ চুলের বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায়। কিছু সময়ে, লোমকূপগুলি চুল গজানো বন্ধ করে, যার ফলে আমাদের মাথার ত্বকের চুল পাতলা হয়ে যায়। চুলের রংও হারাতে শুরু করে। একজন মহিলার চুলের রেখা স্বাভাবিকভাবেই কমতে শুরু করে।
১০. উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ঔষধ সেবন করার ফলেঃ
কিছু ওষুধের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল চুল পড়া। আপনি যদি মনে করেন যে কোনও ওষুধ আপনার চুলের ক্ষতির কারণ হচ্ছে, তাহলে চুল পড়া একটি সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিনা এমন ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করুন যিনি এটি নির্ধারণ করেছেন। এটা অপরিহার্য যে আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলার আগে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না। হঠাৎ করে কিছু ওষুধ বন্ধ করলে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
১১.টাক সমস্যাঃ
টাক সমস্যা এমন একটি সমস্যা যা ছেলেদের বেশি হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময়ে বংশগত ভাবে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এটি যেকোন বয়সে হতে পারে।এটি এমন একটি রোগ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন চুলের ফলিকলকে আক্রমণ করে (যা চুলকে জায়গায় রাখে), তখন চুল পড়ে যায়। আপনি আপনার মাথার ত্বক, আপনার নাকের ভিতরে এবং আপনার কান সহ আপনার শরীরের যে কোনও জায়গায় চুল হারাতে পারেন। কিছু লোক তাদের চোখের দোররা বা ভ্রু হারায়।
Tags:
Hair Care